সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধকল্পে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা

ক্ষতি হ্রাস (Harm Reduction)

ক্ষতি হ্রাস কার্যক্রম: বাংলাদেশে যে সব মাদক অপব্যবহার হচ্ছে উহা নিম্নরুপ ক্ষতি সাধন করছেঃ

 

  • বাংলাদেশে বর্তমানে মাদক হিসেবে মেথামফিটামিন ইয়াবা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত। এর ফলে কিডনি, লিভার ও ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দীর্ঘমেয়াদে যৌনক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  • কোডিন যুক্ত তরল পদার্থ -ফেনসিডিল একসময় প্রধান মাদক ছিল। ইয়াবা আসার পর ফেনসিডিলের ব্যবহার কিছুটা কমেছে। এটি খাওয়ার কারণে ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যায়। শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না। ফলে স্বাস্থ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ইয়াবার মতো ফেনসিডিলও যৌনক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। অন্যান্য গুরত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • হেরোইন সেবনে লিভার সমস্যা, ফুসফুসে সংক্রমণ, তীব্র কোষ্ঠকাঠিন্য, কিডনি রোগ, হার্ট ও ত্বকে সমস্যা, হেপাটাইটিস, নারীদের সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা, গর্ভপাত ইত্যাদি হতে পারে। আফিম খেলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, যা থেকে অবচেতন হয়ে পড়া এবং বেশি পরিমাণে খেলে মৃত্যুও হতে পারে। মুখ ও নাক শুকিয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব ও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
  • অতিরিক্ত মদ্যপানে লিভার সিরোসিস থেকে শুরু করে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন অনেকে। মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানে বিশ্বব্যাপী বিপুলসংখ্যক মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০টি নানা ধরনের অসুখ-বিসুখ হতে পারে মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল পানে।
  • গাঁজা শিরার ক্ষতি করে, ফলে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা হয়। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের বিকৃতির কারণে স্মৃতিশক্তির সমস্যা দেখা দেয়। স্থায়ী ক্ষতির ঝুঁকি থাকে। পুরুষের টেস্টিকুলার ক্যান্সার হতে পারে। স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হয় এবং দৃষ্টিশক্তি কমে যায়।
  • ক্ষতি হ্রাসের অংশ হিসেবে মাদকাসক্তদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দেশে মাদকাসক্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য সরকারিভাবে ৪টি নিরাময় কেন্দ্র আছে, যার বর্তমান বেড সংখ্যা ১৯৯টি কিন্তু তা মোট মাদকাসক্ত রোগীর তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।
  • সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে বিনামূল্যে রোগীদের থাকা, খাওয়া, ওষুধপত্র ও চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। এমনকি সব সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে রোগীর পাশাপাশি অভিভাবকদেরও বিশেষ কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। কারণ এসব চিকিৎসার পাশাপাশি রোগী ও অভিভাবকদের সচেতনতা খুবই জরুরী।

 

ক্ষতি হ্রাসে সরকার আরো নিম্নরুপ পদক্ষেপ নিয়েছেঃ

 

  • মাদকাসক্তদের চিকিৎসার জন্য গাইডলাইন তৈরি
  • বেসরকারী মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রসমূহকে সরকারী আর্থিক অনুদান প্রদান
  • বেসরকারি পর্যায়ে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র, মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র ও মাদকাসক্তি পরামর্শ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা বিধিমালা, ২০২১
  • বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের মনিটরিং করার জন্য বিভাগীয় কমিশনারির নেতৃত্বে বিভাগীয় মনিটরিং কমিটি ও জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা মনিটরিং কমিটি এর সাথে সমন্বয় করে নিরাময় কেন্দ্রসমূহ পরিদর্শন এবং মনিটরিং করা হচ্ছে।
  • সরকারিভাবে দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ২০০ শয্যার মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। উক্ত প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।
  • কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের আধুনিকীকরণ এবং সম্প্রসারণ করার লক্ষে "ঢাকা কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ" শীর্ষক প্রকল্প নেয়া হয়েছে।
  • মাদকাসক্ত রোগী ও পরিবারের জন্য প্রতি বুধবার কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে বেলা ১১.০০টা হতে বেলা ১টা পর্যন্ত পারিবারিক কাউন্সেলিং সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩০-৩৫ জন পারিবারিক কাউন্সেলিং সেবা গ্রহণ করে।
  • Colombo Plan International Centre for Certification and Education of Addiction professionals (ICCE) এর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক, মনোচিকিৎসক ও কাউন্সিলর এরূপ ১৪ জন ব্যক্তিকে ৯টি কারিকুলামের উপর Training of Trainers (TOT) প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
  • মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আওতায় ঢাকার তেজগাওস্থ কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে মাদকাসক্ত শিশু/পথশিশুদের জন্য ১০ শয্যার চিকিৎসা সুবিধা চালু করা হয়েছে।