আশির দশকে সারা বিশ্বে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে এ সমস্যার মোকাবেলায় মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার রোধ, মাদকের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে গণসচেতনতার বিকাশ এবং মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনকল্পে ১৯৮৯ সনের শেষের দিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ, ১৯৮৯ জারী করা হয়। অতঃপর ২ জানুয়ারী, ১৯৯০ তারিখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন,১৯৯০ প্রণয়ন করা হয় এবং নারকটিকস এন্ড লিকারের স্থলে একই বছর তৎকালীন রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের অধীন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ তারিখ এ অধিদপ্তরকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাস্ত করা হয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালেয়র অধীন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। দেশে অবৈধ মাদকের প্রবাহ রোধ, ঔষধ ও অন্যান্য শিল্পে ব্যবহার্য বৈধ মাদকের শুল্ক আদায় সাপেক্ষে আমদানি, পরিবহন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, মাদকদ্রব্যের সঠিক পরীক্ষণ, মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিতকরণ, মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নিরোধ কার্যক্রমের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে নিবিড় কর্ম-সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা অধিদপ্তেরর প্রধান দায়িত্ব।
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১৮(১) অনুযায়ী “জনগনের পুষ্টির স্তর-উন্নযন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবেন এবং বিশেষত রোগ্যের প্রয়োজন কিংবা আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট অন্যবিধ প্রয়েপাজন ব্যতীত মদ্য ও অন্যান্য মাদক পানীয় এবং স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার, 2018 এর 3.6 অনুচ্ছেদে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, সামপ্রদায়িকতা ও মাদক নির্মুলে লক্ষ্য ও পরিকল্পনায় সন্ত্রাস জঙ্গীবাদ, সামপ্রদায়িকতা ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রতি সরকারের দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করা হয়েছে।সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার, 2018, এসডিজি ও রূপকল্প 2041 এর লক্ষ্য এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাদকের বিস্তার রোধ, মাদকাসক্তি পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে অধিদপ্তর হতে নানমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।মাদকের ভয়াবহ ছোবল থেকে রক্ষার জন্য মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের সনাক্ত করে চিকিৎসা দিয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা আবশ্যক।দেশকে মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে রক্ষার জন্য মাদকবিরোধী গণসচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম আরো জোরদার করা, সমন্বিত ও ফলপ্রসূ উপায়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা এবং মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রনয়ণ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাহিদা হ্রাস (Demand Reduction), সরবরাহ হ্রাস (Supply Reduction) এবং ক্ষতি হ্রাস (Harm Reduction) কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে ।
মাদকবিরোধী সরকারি/ বেসরকারি যাবতীয় কাজের সমন্বয় সাধন, তত্ত্বাবধান, মূল্যায়ন, পরামর্শ প্রদান ও মাদকবিরোধী জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও প্রচার কমিটি রয়েছে। মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর নেতৃত্বে ‘জাতীয় মাদকদ্রব্য উপদেষ্টা কমিটি’, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব এর নেতৃত্বে ‘জাতীয় মাদকবিরোধী কমিটি’, জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জেলা পর্যায়ে ‘জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও প্রচার কমিটি’ এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে ‘উপজেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও প্রচার কমিটি’ রয়েছে। এছাড়া এনফোর্সমেন্ট কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সমন্বয়ে কোর কমিটি এবং কক্সবাজার ও টেকনাফে ইয়াবা পাচার বিরোধী টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে।